SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - সাহিত্য কণিকা (বাংলা) - কৃষি শিক্ষা | NCTB BOOK

সমন্বিত চাষের ধারণা
ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের গ্রামের প্রায় বাড়িতেই হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালন করা হয় । আবার সেই সাথে অনেকের বাড়িতে রয়েছে পুকুর যেটি ধোয়ামোছা, রান্নাবান্না, গোসল ইত্যাদি গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত হয় । সনাতন পদ্ধতিতে এই সব পুকুরে মাছও লালন করা হয় । এসব হাঁস-মুরগি, মাছ পরিবারের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখে । পুকুরের উপর ঘর করে যদি হাঁস-মুরগি রাখা যায় তবে এদের জন্য অতিরিক্ত জায়গার দরকার হয় না । আবার গরুর গোবর ও হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা পুকুরে সার হিসাবে ব্যবহার করা যায় । সেই সাথে হাঁস-মুরগির উচ্ছিষ্ট খাদ্য পুকুরে ফেলে দিলে তা মাছের সম্পূরক খাদ্যের যোগান দেয় । অব্যবহৃত পুকুরের পাড়ে ফল-মূল এবং শাকসবজির চাষও করা যায় যেখানে পুকুরের তলার অতিরিক্ত কাদা (পচা জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ) সার হিসাবে ব্যবহার করা যায় । অন্যদিকে ফলমূল ও শাকসবজির ঝরাপাতা কমপোস্ট সার হিসাবে পুকুরে ব্যবহার করা হয় । আবার কৃষকের ধানের জমিতে যে কয়েকমাস পানি থাকে সে সময়ে ধানের পাশাপাশি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব । এ ক্ষেত্রে মাছের বিষ্ঠা ক্ষেতের উর্বরতা বাড়াতে সাহায্য করে । এই মাছ ধানের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফেলে এবং মাছের চলাচল জমিতে আগাছা জন্মাতে বাধা দেয় । এভাবে যখন একই জমিতে একই সময়ে একাধিক ফসল উৎপাদন করা হয় তাকে সমন্বিত চাষ বলে । সমন্বিত চাষে যখন মাছের সাথে অন্য ফসলের চাষ করা হয় তখন তাকে সমন্বিত মাছ চাষ বলে ।

সমন্বিত চাষের গুরুত্ব
একই জমিতে একই সময়ে অল্প খরচে একাধিক ফসল পাওয়া যায়। ফলে বাড়তি খাদ্য উৎপাদিত হয়। একই ফসল অপর ফসলের সহায়ক হিসাবে কাজ করে । পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে । সার ব্যবহারের খরচ কমে । শ্রমের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হয় (একটি ফসলের জন্য যে শ্রম প্রয়োজন, সেই একই শ্রমে একাধিক ফসল উৎপাদিত হয়) । সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয় ও অপচয় রোধ হয় ৷ ঝুঁকি কম থাকে অর্থাৎ কোনো কারণে একটি ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হলে অন্য ফসল উৎপাদন কার্যক্রমের মাধ্যমে সে ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নেওয়া যায় । নিচে আমরা দুইটি গুরুত্বপূর্ণ সমন্বিত মাছ চাষ পদ্ধতি (সমন্বিত মাছ ও হাঁস/মুরগি চাষ এবং ধানক্ষেতে মাছ ও গলদা চিংড়ি চাষ) সম্পর্কে জানব ।

ক) সমন্বিত মাছ ও হাঁস/মুরগি চাষ মাছ ও হাঁস/মুরগির সমন্বিত চাষের সুবিধা

১. পুকুরের উপর হাঁস/মুরগির ঘর তৈরি করা হয় বলে আলাদা জায়গার প্রয়োজন হয় না ।

২. হাঁস/মুরগির বিষ্ঠা সরাসরি পুকুরে পড়ে যা মাছ চাষের জন্য উৎকৃষ্ট জৈব সার, এই পদ্ধতিতে পুকুরে বাইরে থেকে কোনো সার দেওয়ার দরকার নেই।

৩. হাঁস/মুরগির উচ্ছিষ্ট খাদ্য সরাসরি পুকুরে পড়ে যা মাছ খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে ফলে মাছের জন্য আলাদা কোনো সম্পূরক খাদ্য দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।

৪. হাঁস পুকুরের পোকামাকড় ও ব্যাঙাচি খেয়ে পুকুরের পরিবেশ ভালো রাখে ।

৫. হাঁস পুকুরের পানিতে সাঁতার কাটে বলে বাতাস থেকে অক্সিজেন পানিতে মেশে, ফলে পানিতে অক্সিজেনের সমস্যা হয় না।

৬. একই জায়গা থেকে মাছ, মাংস ও ডিম পাওয়া যায়, ফলে অধিক খাদ্য উৎপাদন ও সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয় ।

পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি : খুব ছোট আকারের পুকুর সমন্বিত মাছ ও হাঁস/মুরগি চাষের জন্য তেমন উপযোগী নয় । পুকুরের আয়তন ন্যূনতম ৩৩ শতক হলে ভালো হয়। বছরে কমপক্ষে ৮-১০ মাস ১.২ থেকে ১.৮ মিটার (৪-৬ ফুট) পানি থাকে এমন পুকুর নির্বাচন করতে হবে। এরপর যথাযথ নিয়মে মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুত করে নিতে হবে । তবে সমন্বিত হাঁস-মুরগি ও মাছ চাষে পুকুর প্রস্তুতিকালীন সময়ে সার প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। চুন দেওয়ার ৭দিন পর পুকুরের উপর বানানো ঘরে হাঁস/মুরগির বাচ্চা মজুদ করতে হবে । হাঁস/মুরগির বাচ্চা মজুদের ৭-১০ দিন পর পুকুরে মাছের পোনা ছাড়তে হবে ।

হাঁস-মুরগির ঘর নির্মাণ : খরচ কমানোর জন্য স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত বাঁশ, কাঠ ও ছন দিয়ে এক চালা বা দো-চালা ঘর তৈরি করা যায় । ঘরটি পাড় থেকে ১.২ থেকে ১.৫ মিটার (৪-৫ ফুট) ভিতরে পানির উপর হবে যেন শুকনো মৌসুমে পানি কমে গেলেও বিষ্ঠা ও উচ্ছিষ্ঠ খাদ্য মাটিতে না পড়ে পানিতে পড়ে । পানির উপরিভাগ থেকে ঘরের মেঝের দুরত্ব ০.৪৬-০.৬ মিটার (১.৫-২ফুট) এবং মেঝে থেকে ঘরের চালার উচ্চতা হবে ১.২-১.৫ মিটার (৪-৫ ফুট)। ঘরের ভিতরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের জন্য চালা ও ঘরের বেড়ার মাঝের জালের মতো বেড়া বা জাল দিয়ে ঘিরে দিতে হবে। ঘরের মেঝে বাঁশের বাতা দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে। এক বাতা থেকে অন্য বাতার দূরত্ব হবে ১ সেমি। এতে করে মুরগির বিষ্ঠা ও উচ্ছিষ্ঠ সরাসরি পানিতে পড়বে কিন্তু মুরগির পা বাতার ফাকে ঢুকে আঘাত প্রাপ্ত হবে না । হাঁস/মুরগির ঘর অনেকসময় পুকুরের পাড়েও তৈরি করা হয় ।

হাঁস-মুরগির জাত ও সংখ্যা নির্ধারণ : প্রতি শতাংশ পুকুরের জন্য উন্নতজাতের ২টি হাঁস বা মুরগি (ব্রয়লার বা লেয়ার) পালন করা যায় ।

হাঁস-মুরগির খাদ্য : বাচ্চা অবস্থায় ৯০ দিন পর্যন্ত প্রতিটি হাঁসের জন্য প্রতিদিন ৬০-৯০ গ্রাম এবং পরবর্তীতে ১১০-১২৫ গ্রাম সুষম খাদ্য দিতে হবে। হাঁসকে খাদ্য খাওয়ানোর সময় প্রয়োজনমতো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। ব্রয়লার মুরগিকে প্রয়োজন অনুযায়ী সব সময় খাবার প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি লেয়ার মুরগির জন্য ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত ৮০-৯০ গ্রাম এবং পরবর্তীতে ১১০-১২০ গ্রাম হারে দৈনিক খাবার প্রদান করতে হবে। খাদ্য ও পানি খাওয়ানোর জন্য পৃথক পৃথক পাত্র ব্যবহার করতে হবে ।

হাঁস-মুরগির রোগবালাই দমন : হাঁস/মুরগির রোগ হতে পারে। রোগ হলে নিকটস্থ পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে । রোগ প্রতিরোধের জন্য হাঁস-মুরগির ঘর সবসময় শুকনো রাখতে হবে । ঘরের মেঝে  এবং খাদ্য ও পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে । চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত টিকা ও ইনজেকশন দিতে হবে । অসুস্থ হাঁস-মুরগিকে যতদ্রুত সম্ভব ভালোগুলোর কাছ থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে । মাছের প্রজাতি নির্বাচন ও মজুদ ঘনত্ব : পুকুরে ৮-১২ সেমি আকারের বিভিন্ন কার্পজাতীয় মাছের পোনা শতক প্রতি ৩৫-৪০টি নিম্নলিখিত অনুপাতে ছাড়া যায় তার মধ্যে শতক প্রতি কাতলা/বিগহেড ৪টি, সিলভার কার্প ৯টি, রুই ৮টি, মৃগেল ও কার্পিও ৪টি করে, গ্রাস কার্প ১টি এবং সরপুঁটি ৫-১০টি ছাড়তে হবে । গ্রাসকার্প ঘাসজাতীয় খাদ্য খায় । তাই পুকুর পাড়ে জমানো ঘাস, নরম পাতা, কলা পাতা ইত্যাদি নিয়মিত পুকুরে দিতে হবে । অন্য জাতের মাছের জন্য বাইরে থেকে কোনো খাদ্য দেওয়ার দরকার নেই । পানিতে পড়া হাঁস/মুরগির উচ্ছিষ্ট খাদ্যই এরা গ্রহণ করবে।

মাছ মজুদোত্তর যত্ন : প্রতিমাসে একবার জাল টেনে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে । পুকুরে অক্সিজেনের অভাব হলে নতুন পানি সরবরাহ বা বাঁশ পিটিয়ে বা সাঁতার কেটে পানিতে সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে । পুকুরের তলদেশে গ্যাস জমা হলে হররা টেনে পুকুর থেকে গ্যাস দূর করা যেতে পারে । ক্ষত রোগের আশঙ্কা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শীতের শুরুতে শতক প্রতি ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা যায় ।

উৎপাদন : সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাছ ও হাঁস/মুরগির সমন্বিত চাষ করা হলে পুকুরে কোনো সার বা খাদ্য প্রয়োগ ছাড়াই শতক প্রতি ১৮ থেকে ২১ কেজি মাছ উৎপাদন করা যায়। খাকি ক্যাম্পবেল বা ইন্ডিয়ান রানার জাতের হাঁস বছরে ২৫০-৩০০ টি ডিম দেয়। একটি ব্রয়লার মুরগি ২ মাসে প্রায় ১.৫-২ কেজি ওজনের হয় এবং লেয়ার মুরগি বছরে ২০০-২৫০ টি ডিম দিয়ে থাকে ।

খ) ধানক্ষেতে মাছ ও গলদা চিংড়ি চাষ
ধান চাষের সময় অনেক জমিতেই দীর্ঘদিন পানি ধরে রাখার দরকার হয় । এসব ধানক্ষেত একটু পরিকল্পনা মাফিক তৈরি করে নিলে একই জমিতে এক বছরে ধান এবং মাছ ও গলদা চিংড়িসহ একাধিক ফসল ফলানো সম্ভব । বিশেষজ্ঞের মতে বাংলাদেশে বর্তমানে ২.০০ লক্ষ হেক্টর জমি ধানক্ষেতে মাছ বা চিংড়ি চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী যা এখনই ব্যবহার করা যায় । আরও ৩.০ লক্ষ হেক্টর ধানের জমি ভবিষ্যতে গলদা ও মাছ চাষের জন্য ব্যবহার করা যাবে ।

ধানক্ষেতে মাছ ও গলদা চিংড়ি চাষের সুবিধা : একই জমিতে অতিরিক্ত ফসল হিসাবে মাছ ও গলদা চিংড়ি উৎপাদন হয় । এতে জমির সর্বোত্তম ব্যবহার হয় । মাছ ধানের ক্ষতিকর কীট পতঙ্গ ও পোকামাকড় খেয়ে ফেলে । তাই ধানক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহারের দরকার হয় না । মাছ ও চিংড়ির চলাফেরার কারণে ক্ষেতে আগাছা জন্মাতে বাধা সৃষ্টি হয় । মাছ ও চিংড়ির বিষ্ঠা ক্ষেতের উর্বরতা বাড়াতে সাহায্য করে ফলে সারের খরচ তুলনামূলক কম হয় । গবেষণায় দেখা গেছে এ পদ্ধতিতে ধানের ফলন গড়ে শতকরা ১৫ ভাগ বৃদ্ধি পায় ৷

জমি নির্বাচন : যেসব জমিতে কমপক্ষে ৪-৬ মাস পানি ধরে রাখা সম্ভব এবং চাষকালীন সময়ে ক্ষেতের সব অংশে কমপক্ষে ১২-১৫ সেমি পানি থাকে সেসব জমিতে ধান এবং মাছ ও গলদার সমন্বিত চাষ সম্ভব। যে সব জমি উঁচু অর্থাৎ পানি ধরে রাখতে পারে না, আবার যে সমস্ত জমি বেশি নিচু অর্থাৎ সহজে প্লাবিত হয় এদের কোনোটিই মাছ চাষের জন্য উপযোগী নয় ।
মাছ ও গলদা চাষের জন্য ধানক্ষেত প্রস্তুতকরণ
জমির আইল তৈরি/ মেরামত : জমির আইল শক্ত, মজবুত করে তৈরি বা মেরামত করতে হবে । সাধারণ বন্যায় যে পরিমাণ পানি হয় তার চেয়ে ৩০-৬০ সেমি উঁচু করে আইল তৈরি করা ভালো । আইল পর্যাপ্ত চওড়া হতে হবে । এতে আইল তাড়াতাড়ি ভাঙবে না ও আইলে কিছু শাকসবজিও চাষ করা যাবে ।

ধানক্ষেতে ডোবা ও খাল/নালা খনন : মাছ ও চিংড়ির আশ্রয় ও চলাচলের সুবিধার জন্য ধান ক্ষেতের আইলের চারপাশে ভিতরের দিকে নালা খনন করা হয় অথবা আইলের এক বা দুইপাশে নালা বা ডোবা খনন করা হয়। আবার অনেকক্ষেত্রে ধান ক্ষেতের মাঝখানে বা কোনায় ডোবা খনন করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষেতে নালা ও ডোবা দুই-ই খনন করা হয়। সেক্ষেত্রে ডোবার সাথে নালার সংযোগ থাকে । মোট জমির শতকরা ১৫ ভাগ জায়গা ডোবা ও নালা হলেই চলে । এদের গভীরতা ০.৫-০.৮ মিটার হলে ভালো হয় । জমির ঢালু বা নিচু অংশে ডোবা তৈরি করা হয় ।

ধানক্ষেতে ডোবা ও নালা তৈরির সুবিধা হচ্ছে- (১) ক্ষেতের পানি কমে গেলে বা খুব গরম হয়ে গেলে চিংড়ি ও মাছ গর্ত ও নালার অপেক্ষাকৃত গভীরে ঠাণ্ডা পানিতে আশ্রয় নিতে পারে । (২) আগাছা পরিষ্কার বা মাছ ধরার প্রয়োজন হলে জমির পানি শুকিয়ে মাছগুলোকে নালা বা ডোবায় এনে তা সহজেই করা যায় ।

গলদা চিংড়ির আশ্রয়স্থল সৃষ্টি : চিংড়ির জন্য ডোবা বা খালে কৃত্রিম প্লাস্টিক বা শুকনো কঞ্চি দিয়ে গলদার আশ্রয়স্থল তৈরি করতে হবে । চিংড়ি এখানে খোলস বদলের সময় নাজুক অবস্থায় আশ্রয় নিতে পারবে । ধানের জমি তৈরি : জমিতে ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে প্রচলিত নিয়মে সার, গোবর ইত্যাদি প্রয়োগ করে ধান রোপণ করতে হবে।

ধানের জাত নির্বাচন : ধানের সাথে মাছ ও চিংড়ি চাষের জন্য বি আর-৩ (বিপ্লব), বি আর-১১ (মুক্তা), বি আর −১৪ (গাজী), বি আর -২ (মালা) ইত্যাদি উচ্চ ফলনশীল ধান নির্বাচন করা উচিত ।

ধান রোপণ পদ্ধতি : ধানের চারা সারিবদ্ধভাবে রোপণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০-২৫ সেমি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ১৫-২০ সেমি রাখতে হবে । পর পর ৫-৬ সারি লাগানোর পর ৩৫-৪০ সেমি ফাঁকা রাখতে হবে। এতে মাছ ও চিংড়ির চলাচলে সুবিধা হয় এবং পানিতে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পড়তে পারে ফলে দ্রুত মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হতে পারে ।

মাছের প্রজাতির নির্বাচন : যেহেতু ধানক্ষেতে খুব বেশি পানি থাকে না তাই কম পানিতে ও কম অক্সিজেনে বাঁচতে পারে, উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে এবং সেই সাথে ধান চাষকালীন সময়ের মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হয় এরূপ দ্রুত বর্ধনশীল মাছ নির্বাচন করতে হবে, যেমন- কার্পিও, সরপুঁটি, তেলাপিয়া । তবে এগুলোর সাথে অল্পসংখ্যক রুই, কাতলা দেওয়া যেতে পারে। আবার মাগুর মাছের পোনাও ছাড়া যায় । তবে গ্রাস কার্প ছাড়া যাবে না কারণ এরা ধান গাছ খেয়ে ফেলতে পারে ।

পোনা মজুদ : ধান রোপণের ১০-১৫ দিন পর যখন ধান গাছ শক্তভাবে মাটিতে লেগে যাবে তখন চিংড়ি ও মাছ মজুদ করতে হবে । শতাংশ প্রতি মাছের পোনা ১৫-২০টি ও চিংড়ির পোনা ৪০-৫০টি মজুদ করা যেতে পারে ।

সম্পূরক খাদ্য তৈরি ও প্রয়োগ : চালের কুঁড়া, খৈল, ফিশমিল ১:১:১ অনুপাতে নিয়ে এর সাথে প্ৰয়োজনীয় পরিমাণ আটা পানিতে ফুটিয়ে আঠালো করে উক্ত উপকরণগুলোর সাথে মিশিয়ে কাই করে ছোট ছোট বল বানিয়ে মাছ ও চিংড়িকে সরবরাহ করতে হবে। প্রতিদিন দেহের ওজনের ৩-৫% খাবার তিন ভাগ করে সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় প্রয়োগ করতে হবে ।

ব্যবস্থাপনা : ধানের সাথে মাছ চাষ করলে কীটনাশক দেওয়া উচিত নয়। তবে কীটনাশক ব্যবহার অত্যাবশ্যক হলে ক্ষেতের পানি কমিয়ে মাছকে ডোবা/নালায় আটকিয়ে তা করতে হবে । কীটনাশক ব্যবহারের অন্তত ৫ দিন পর সেচ দিয়ে পুনরায় মাছকে সমস্ত জমিতে চলাচলের সুযোগ করে দিতে হবে । ক্ষেতের পানি কমে গেলে দ্রুত সেচের ব্যবস্থা করতে হবে । মাছে রোগবালাই এর লক্ষণ দেখা দিলে মাছগুলোকে ডোবার মধ্যে নিয়ে শতক প্রতি ১ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে ।

ধান, মাছ ও চিংড়ি আহরণ : ধান কাটার সময় হলে ক্ষেতের পানি কমিয়ে চিংড়ি ও মাছগুলোকে নালা বা ডোবায় এনে ধান কাটতে হবে । ধান কাটার পরও যদি ক্ষেতে পানি থাকে বা পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে পরবর্তী ফসল শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত মাছ চাষ চালিয়ে নেওয়া যেতে পারে ।

Content added By